ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক কয়েক ক্যাটাগরির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করছে। ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা ক্রেডিট কার্ডের ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে।
ক্রেডিট কার্ড কে প্লাস্টিক মানি বলা হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড ব্যাংক কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে। যা ব্যাংকের গ্রাহকগণ প্রয়োজনীয় সকল আর্থিক লেনদেনের কাজে ব্যবহার করে থাকে।
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ৩ ক্যাটাগরির ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে। এগুলো হলো- সিলভার কার্ড, গোল্ড কার্ড এবং প্লাটিনাম কার্ড।
ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ক্রেডিট কার্ড সকলের নিকট সব থেকে বেশি জনপ্রিয়। কেননা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ক্রেডিট প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে।
ইসলামী ব্যাংক সকল গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড সুবিধা প্রদান করে না। ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সমূহ পূরণ করে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। যেমন-
- ক্রেডিট কার্ড আবেদনকারীকে অবশ্যই ইসলামী ব্যাংকে একটি সচল একাউন্ট থাকতে হবে।
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন আয়ের স্তর সিলভার কার্ডের জন্য ২০ হাজার টাকা ও গোল্ড কার্ডের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং প্লাটিনাম কার্ড এর জন্য ১ লক্ষ টাকা হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে।
- আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই বছরের কর্মস্থলের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- একটি স্থায়ী আয়ের উৎস থাকতে হবে। যেমন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ডাক্তার অথবা যে কোন পেশায় নিয়োজিত থাকতে হবে।
ক্রেডিট কার্ড কি
ক্রেডিট কার্ড হলো এক ধরনের অর্থ পরিশোধ বা লেনদেন ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কার্ড। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় বা মূল্য পরিশোধ করা যায়।
ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ক্রেডিট কার্ড একটি শরীয়ত সম্মত লেনদেন ব্যবস্থা যা গ্রাহকদের সুবিধাজনক কেনাকাটা ও শপিং, ভ্রমণ এবং অনলাইন পেমেন্টের সুযোগ প্রদান করে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড কি ভাবে পাবো
ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা থাকলে আবেদন ফরম পূরণ করে নির্ধারিত কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এ সকল কাগজপত্র ক্রেডিট কার্ড অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন-
- পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন সদ্য তোলা ৪ কপি ছবি।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- ৬ থেকে ১২ মাসের লেনদেন অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্টের তথ্য।
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে আয়ের প্রমাণপত্র।
- ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
এ সকল কাগজপত্র এবং আবেদন ফরম সঠিক ভাবে পূরণ করে জমা দেওয়ার ৭ দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে ক্রেডিট কার্ড প্রস্তুত হয়েছে কিনা।
ক্রেডিট কার্ড খরচ
ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চার্জ প্রদান করতে হয়। ক্রেডিট কার্ডের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ডের খরচ নির্ভর করে। যেমন-
- প্রাইমারি কার্ডের জন্য বাৎসরিক ফি সিলভার ১ হাজার টাকা, গোল্ড ১৫০০ টাকা এবং প্লাটিনাম ২ হাজার টাকা।
- প্রথম সাপ্লিমেন্টারি বাৎসরিক ফি প্রতিটি কার্ডের জন্য ফ্রি এবং দ্বিতীয় ও পরবর্তী সাপ্লিমেন্টারি ফি প্রতিটি কার্ডের জন্য ৫০০ টাকা।
- মাসিক মেইনটেন্যান্স ফি সিলভার ৫০০ টাকা, গোল্ড ১ হাজার টাকা এবং প্লাটিনাম ১৫০০ টাকা।
- মাসিক ওভার লিমিট চার্জ এবং লেট পেমেন্ট চার্জ ৫০০ টাকা।
- কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফি প্রতিটি কার্ডের জন্য ৫০০ টাকা এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি ১৫০ টাকা।
- প্রতিটি কার্ডের জন্য প্রথম কার্ড চেক বই ফি ১৫০ টাকা এবং দ্বিতীয় ও পরবর্তী কার্ড চেক বই ফি ২০ টাকা।
কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো
ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন করা যায়। এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা থেকে শুরু করে হোটেল ও বিমানের টিকেট বুকিং করা যায়।
ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড গুলোর সাহায্যে সুদ মুক্ত লেনদেন করা যায়। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর ইসলামিক ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডটি সব থেকে ভালো।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম
ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ লেনদেন এবং উত্তোলন করা যায়। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম মেনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা উচিত। যেমন-
- ক্রেডিট স্কোর ঠিক রাখতে সময় মত ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করা।
- প্রতারণামূলক চার্জের জন্য নিয়মিত আপনার ক্রেডিট কার্ড বিবৃতি নিরীক্ষণ করুন।
- একসাথে একাধিক ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন না করা।
- অগ্রিম লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন না।
- সুদের চার্জ এড়াতে সময়মতো সম্পূর্ণ ব্যালেন্স পরিশোধ করুন।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা
নগদ অর্থ বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুকিমুক্ত অর্থ বহন করতে ক্রেডিট কার্ড সাহায্য করে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। যেমন-
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা সমূহ-
- জরুরী পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ড অর্থ সরবরাহ করে থাকে।
- ক্রেডিট কার্ড ক্যাশব্যাক, ভ্রমণ পয়েন্ট এবং ক্রয় সুরক্ষার মত সুবিধা প্রদান করে।
- ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইন এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যায়।
- ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিও জালিয়াতি এবং অননুমোদিত লেনদেনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- কিছু ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে সুদ মুক্ত লেনদেন করা যায়।
ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা সমূহ-
- সময় মতো ব্যালেন্স পরিশোধ করতে না পারলে সুদের চার্জ বৃদ্ধি পাবে।
- ক্রেডিট কার্ড চুরি হলে আপনি চার্জের জন্য দায়ী হতে পারেন।
- কিছু ক্রেডিট কার্ডে উচ্চ সুদের হার থাকায় ব্যালেন্স পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়তে হয়।
ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা না থাকলে প্রথমে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার বা ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত কোনো তথ্য কারো সাথে শেয়ার না করা। এ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে ক্রেডিট কার্ডের ছবি তুলতে না দেওয়া। ইত্যাদি।